পড়াশোনার টাকা জোগাড় করার জন্য ৯ বছর বয়সে খবরের কাগজ বিলি করতেন এই IFS অফিসার
পি বালামুরুগান (P Balamurugan) আজকের জীবনে অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত একজন মানুষ। ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের (IFS) অত্যন্ত গুুরুত্বপূর্ন পদে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন বালামুরুগান। কিন্তু জীবনের শুরুর অধ্যায় আজকের মত এতটা মসৃণ ছিল না তাঁর। বালামুরুগান নিজের জীবনকে একটা ‘অ্যাডভেঞ্চার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

বালামুরুগান-এর জীবন সংগ্রাম শুরু সেই ছোট্ট থেকেই। যখন তিনি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকেই সংবাদপত্র বিলি করার কাজ শুরু করেন। অনেক কষ্টে জীবন যাপন করে গেছেন, লড়াই করে গেছেন কেবল মাত্র নিজের পড়াশোনা চালাবেন বলে। তাঁর পড়াশোনার পেছনে একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তাঁর মা। বালামুরুগান জানান, খুব অল্প বয়সেই তাঁর বাবা তাঁদের ছেড়ে চলে যান। ছয় ভাই বোনের সংসার সামলাতে মায়ের নাজেহাল অবস্থা সেই সময়। অনেক কষ্টে কোনক্রমে সংসার চলত বালামুরুগান এর। তবু পড়াশোনা থামান নি তিনি ও তাঁর ভাই বোনেরা।
পড়াশোনার জন্য সংবাদপত্র কিনে পড়তে পারেন নি দরকারে। নগদ ৯০ টাকা দিয়ে সংবাদপত্র সাবস্ক্রিপশন এর টাকা ছিল না তখন বালামুরুগান এর হাতে। এই কথা জানতে পেরে সেই ব্যক্তি যিনি সংবাদপত্র বিক্রি করতেন, তিনিই বালামুরুগান কে সন্ধান দিলেন কাজের। মাত্র ৩০০ টাকা মাসিক বেতনের বিনিময়ে বালামুরুগান যোগ দিলেন খবরের কাগজ বিলি করার কাজে। সেই কাজই করতে থাকলেন মন দিয়ে।
বাবা সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বালামুরুগান এর মা নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে অতি কষ্টে চেন্নাই তে ৪৮০০ বর্গফুট জমি কেনেন। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে যার মধ্যে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ১২০০ বর্গফুট জমি বিক্রি করে দেন। সেই টাকায় পড়াশোনা চালিয়ে বালামুরুগান এর বড় দিদি প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হন। এরপর শুরু হয় বালামুরুগান এর নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই।

মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ২০১১ সালে ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজের স্নাতক ডিগ্রী পাস করেন বালামুরুগান। এরপর নিজের চাকরি জীবন শুরু করেন টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস তে। এরপরে অনেক পড়াশোনা করে অবশেষে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস-এ যোগদান করেন। বর্তমানে যদিও রাজস্থানের ডুঙ্গারপুর বন বিভাগে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে। ছোট থেকে এত লড়াই-এর পরেও যে তিনি হারিয়ে যাননি তার কর্ম জীবনই তার প্রমাণ।